০৭:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শরনখোলায় আওয়ামী নেতার ক্লিনিকে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু, ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা

বাগেরহাটের শরনখোলায় ভূল চিকিৎসা, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারনে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় নিহতের পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজ সহ নানাবিধ হুমকি ধামকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। অন্যদিকে ঘটনা সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক-ডাক্তার সবাই দুষছেন একে অপরকে। ঘটনার পরপরই ঐ ক্লিনিকের সবাই লাপাত্তা। এদিকে ক্ষোভে ফুসছে স্থানীয়রা। ঐ ক্লিনিকের মালিকানার দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী নেতা ওবায়দুল ইসলাম ফকির।
উপজেলা সদরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর নাকের ডগায় শাপলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত ৩১ আগষ্ট বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, উপজেলার বড় রাজাপুর (চিনির খাল পাড়) এলাকার আমির হোসেন হাওলাদার এর মেয়ে নিপা আক্তার নিরাপদে বাচ্চা প্রসব করার জন্য গত ২৯ আগষ্ট সকালে ওই ক্লিনিকে ভর্তি হন। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সিজার করার কথা জানায়। সেই মোতাবেক ওই দিন বিকালে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সাবেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফয়সাল আহম্মেদ ঐ সিজার অপারেশন করেন। এ সময় নিপা একটি ফুটফুটে কন্য সন্তান জন্ম দেন। শিশুটি সুস্থ থাকলেও প্রসূতি মায়ের প্রচন্ড ব্যথা জনিত অসুস্থতা বাড়তে থাকে। নিহত নিপা (২৭) এর মা, রানী বেগম জানান, সিজারের পর থেকেই নিপার পেট ও মেরুদন্ডে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়।

এ সময় আমার ডাক চিৎকারে একজন নার্স ও লোপা দাস নামে একজন ছুটে আসেন। তারা এসে একের পর এক ইনজেকশন দিতেই থাকেন। তাতেও আমার মেয়ের ব্যাথার কোন উন্নতি হয়নি। তারা এই দুদিন ইনজেকশন দিয়ে আমার মেয়ের শরীরের কোন জায়গা ফাকা রাখেনি। আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে চাইলে তারা সুস্থ করতে পারবে বলে আমাদেরকে যেতে দেয়নি। তবে এসময় ঐ ক্লিনিকের কোন ডাক্তার তার মেয়ের চিকিৎসায় এগিয়ে আসেনি। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে ৩১ আগষ্ট বিকেলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে তোলার আগেই তার মৃত্যু ঘটে। নিহত নিপা আক্তারের স্বামী হাদিস শেখ বলেন, সিজারের পর থেকেই রোগীর মেরুদন্ডে প্রচন্ড ব্যথা হয়। তখন তারা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে জানালে পরপর কয়েকটি ব্যথানাশক ইনজেকশন পুশ করেন লোপা দাস । ডাক্তারের মাধ্যমে ঠিকমত চিকিৎসা দিলে আমার স্ত্রীর এমন অকাল মৃত্যু ঘটত না।

সিজারকারী ডাক্তার ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, আমি এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ প্রিয় গোপাল দুজনে মিলে অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করি। এর পরবর্তী অবস্থার বিষয়ে আমি অবগত নই। এ সময় নার্স ও লোপা দাস সটকে পড়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান শাপলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ওবায়দুল ইসলাম ফকির জানান, আমরা যা করেছি সব কিছুই নিয়ম মাফিক করেছি। আমাদের কোন গাফেলতি নেই।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পারবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ প্রিয় গোপাল জানান, আমি ঐ রোগীর সিজার সংক্রান্ত কোন কার্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলাম না। এমনকি মেরুদন্ডে অজ্ঞান করা ইনজেকশন আমি পুষ করিনি। সিজার সংক্রান্ত জটিলতা এবং পরবর্তী চিকিৎসা পরিচর্যার কারনে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।

 

শরণখোলা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহীদুল্লাহ বলেন,  ঘটনার ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। তবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও নিহতের পরিবারের মধ্যে একটা সমঝোতা হয়েছে বলে ওসি জানান।

 

বিষয়