বাগেরহাট ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট যেন ভূতের বাড়ি

নিরব-নিস্তব্ধ। নেই কারো সাড়া শব্দ। মাঝে মাঝে ভেসে আসে বাতাসের শো শো শব্দ। কিছু কিছু জায়গায় থেকে খসে পড়ছে দেওয়ালের প্যালেস্তার। ভেঙ্গে পড়েছে ছাদের রেলিং। দেওয়ালের কোথাও জমেছে শেওলা, কোথাও মাকড়শার জালের মত শিকড় বিছিয়েছে পরজীবী উদ্ভিদ। জানালার গ্রিল মরিচার ভারে বিব্ধস্ত। ভবনের প্রবেশে কাঠের দুই দরজার এক অংশ টিকে আছে অযত্ন-অবহেলায়। অন্য অংশের অস্তিস্বই নেই। ভবনের ভিতরে প্রবেশ করতেই গা শিউরে ওঠে। দরজার সামনে থেকে সোজা সিড়ি উঠে গেছে। ডানে-বামে কক্ষ গুলোয় অবছা আলো। ভিতরের বেশির ভাগ দরজাই ভাঙ্গা। মেঝেতে ময়লার স্তুপ। ধীর পায়ে বামে এগিয়ে মনে হচ্ছিলো এ যেন গল্পে শোনা রুপকথার ভূতের বাড়ি।

বলছিলাম বাগেরহাটের সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে অবস্থিত জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্টের কথা। ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সী এতিম ও দুস্থদের লালন-পালন ও সাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৩০ জন এতিম ও দুস্থদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু হয় ২০০০ সালে। ৩ দশমিক ৯০ একর জমিতে করা ওই প্রতিষ্ঠানে ৫ কক্ষের অফিস ভবন, এতিম-দুস্থদের থাকার জন্য ৩০ শয্যা বিশিষ্ট দোতলা আবাসিক ভবন, ১৮ কক্ষের দোতলা প্রশিক্ষণ ভবন, একতলা ক্লিনিক ভবন, মসজিদ, পুকুর, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ উপকরণ এবং ৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সবই ছিল। এলাকাবাসী জানান, তারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভালবেসে এই জমি দান করেছিলেন।
তারা জানান, চালুর পর ২০১১ সাল পর্যন্ত গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন এতিম ও দুস্থ নিয়ে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। এখানে একটি ক্লিনিক চালুর কথা থাকলেও তা আর হয়নি। ২০১০ সালে ওমান সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ আছে-তৎকালীন আওয়ামী লীগের অসাধু লোকজন লুটে খায়। অবিভাবক শূন্যতায় এবং এলাকায় শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ায় দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ২০১২ সালে ১২, ১৩ সালে ১০, ১৪ সালে ৬, ১৫ সালে ৬, ১৬ সালে ৫, ১৭-১৮ সালে এই সংখ্যা ৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে ২ জন দারোয়ান ছাড়া কেউ নেই। ট্রাস্টি বোর্ডে কারা আছে তাও জানেনা কেউ। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কয়েকটি ভবন।
প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ২০০৯ সালে প্রাক-প্রাথমিক এবং ২০১২ সালে মহিলাদের দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করে। প্রাক-প্রাথমিকে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা আসত দর্জিবিজ্ঞান কোর্সে। তখন ১৫ জন শিক্ষার্থী ছিল।
এলাকাবাসীর দাবি অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এখন দেখাশোনার কোন লোক আছে কিনা তারা জানেন না। জমি দাতা এবং এলাকাবাসীর দাবি যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি চালুর। তা না হলে তারা তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনের যান জিয়া চেরিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দণ্ড ভোগকারী জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম খান। প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবিতে এলাকাবাসীর ও জমি দানকারীদের সঙ্গে মানববন্ধনে অংশ নেন তিনি ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যে জমি দান করেছেন তা নজিরবিহীন। অথচ অদক্ষ ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে আজ ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। তিনি জনগণের ভালোবাসায় গড়ে ওঠা এই ট্রাস্টের দায়িত্ব যোগ্যদের হাতে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবিলম্বে চালুর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মোরেলগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির নিন্দা

জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট যেন ভূতের বাড়ি

Update Time : ০৪:১৬:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

নিরব-নিস্তব্ধ। নেই কারো সাড়া শব্দ। মাঝে মাঝে ভেসে আসে বাতাসের শো শো শব্দ। কিছু কিছু জায়গায় থেকে খসে পড়ছে দেওয়ালের প্যালেস্তার। ভেঙ্গে পড়েছে ছাদের রেলিং। দেওয়ালের কোথাও জমেছে শেওলা, কোথাও মাকড়শার জালের মত শিকড় বিছিয়েছে পরজীবী উদ্ভিদ। জানালার গ্রিল মরিচার ভারে বিব্ধস্ত। ভবনের প্রবেশে কাঠের দুই দরজার এক অংশ টিকে আছে অযত্ন-অবহেলায়। অন্য অংশের অস্তিস্বই নেই। ভবনের ভিতরে প্রবেশ করতেই গা শিউরে ওঠে। দরজার সামনে থেকে সোজা সিড়ি উঠে গেছে। ডানে-বামে কক্ষ গুলোয় অবছা আলো। ভিতরের বেশির ভাগ দরজাই ভাঙ্গা। মেঝেতে ময়লার স্তুপ। ধীর পায়ে বামে এগিয়ে মনে হচ্ছিলো এ যেন গল্পে শোনা রুপকথার ভূতের বাড়ি।

বলছিলাম বাগেরহাটের সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে অবস্থিত জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্টের কথা। ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সী এতিম ও দুস্থদের লালন-পালন ও সাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৩০ জন এতিম ও দুস্থদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু হয় ২০০০ সালে। ৩ দশমিক ৯০ একর জমিতে করা ওই প্রতিষ্ঠানে ৫ কক্ষের অফিস ভবন, এতিম-দুস্থদের থাকার জন্য ৩০ শয্যা বিশিষ্ট দোতলা আবাসিক ভবন, ১৮ কক্ষের দোতলা প্রশিক্ষণ ভবন, একতলা ক্লিনিক ভবন, মসজিদ, পুকুর, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ উপকরণ এবং ৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সবই ছিল। এলাকাবাসী জানান, তারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভালবেসে এই জমি দান করেছিলেন।
তারা জানান, চালুর পর ২০১১ সাল পর্যন্ত গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন এতিম ও দুস্থ নিয়ে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। এখানে একটি ক্লিনিক চালুর কথা থাকলেও তা আর হয়নি। ২০১০ সালে ওমান সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ আছে-তৎকালীন আওয়ামী লীগের অসাধু লোকজন লুটে খায়। অবিভাবক শূন্যতায় এবং এলাকায় শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ায় দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ২০১২ সালে ১২, ১৩ সালে ১০, ১৪ সালে ৬, ১৫ সালে ৬, ১৬ সালে ৫, ১৭-১৮ সালে এই সংখ্যা ৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে ২ জন দারোয়ান ছাড়া কেউ নেই। ট্রাস্টি বোর্ডে কারা আছে তাও জানেনা কেউ। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কয়েকটি ভবন।
প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ২০০৯ সালে প্রাক-প্রাথমিক এবং ২০১২ সালে মহিলাদের দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করে। প্রাক-প্রাথমিকে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা আসত দর্জিবিজ্ঞান কোর্সে। তখন ১৫ জন শিক্ষার্থী ছিল।
এলাকাবাসীর দাবি অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এখন দেখাশোনার কোন লোক আছে কিনা তারা জানেন না। জমি দাতা এবং এলাকাবাসীর দাবি যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি চালুর। তা না হলে তারা তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনের যান জিয়া চেরিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দণ্ড ভোগকারী জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম খান। প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবিতে এলাকাবাসীর ও জমি দানকারীদের সঙ্গে মানববন্ধনে অংশ নেন তিনি ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যে জমি দান করেছেন তা নজিরবিহীন। অথচ অদক্ষ ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে আজ ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। তিনি জনগণের ভালোবাসায় গড়ে ওঠা এই ট্রাস্টের দায়িত্ব যোগ্যদের হাতে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবিলম্বে চালুর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।